স্টাফ রিপোর্টার :
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে বিভাজন নতুন নয়। তবে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম ও নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য এই জেলার নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহ কেন্দ্রীয় নেতারা কাঁচপুরের শান্তি সমাবেশে এসেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন প্রতিহত করার কথা বলে গেছেন। তবে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনার প্রতিফলন নেই নারায়ণগঞ্জে। আন্দোলন সংগ্রামেও নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে বিভাজন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। বিএনপি বিভিন্ন স্থানে অবরোধের সমর্থনে আন্দোলন করে গেলেও আওয়ামী লীগ নেতারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে তা প্রতিহত করতে পারছেন না। উত্তর ও দক্ষিন মেরুপন্থি নেতারা পৃথক ভাবে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। যদিও, উত্তর মেরুপন্থিদের নেতা এমপি শামীম ওসমান ইতিপূর্বে দক্ষিন মেরুর নেতাদের ইঙ্গিত করে ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি মেয়র আইভীকে মুঠোফোনে ঐক্যের বার্তাও পাঠিয়েছিলন বলে জানিয়েছেন। একই ভাবে হরতালের দিন আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে শান্তি সমাবেশে দক্ষিন মেরুপন্থিদের নেতা মেয়র আইভী এবং তার অনুসারীরাও ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তবে এই দুই মেরুর নেতাদের ঐক্যের ডাকাডাকিতেই বেলা শেষ হয়েছে। আজ শেষ হচ্ছে বিএনপির ডাকা তিনদিনের অবরোধ কার্যক্রমও। তবে, এমন কঠিন মুহুর্তেও দুই মেরুর নেতাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। আগামীতেও তারা ডাকাডাতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন নাকি দলের বৃহত্তর স্বার্থে এক হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমরা ঐক্য চাই। আমাদের চেষ্টা আছে ঐক্যবদ্ধভাবে যেন আন্দোলন সংগ্রাম করা যায়। নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক বিভাজনটা খুব কঠিন। তবে আশা করি, আগামীতে ঐক্যবদ্ধভাবেই নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘সমস্যা হলো একজন খুব টপ লেভেল নেতা। যিনি নিজেকে আন্তর্জাতিক নেতা ভাবেন। তিনি সাত ফুট ১০ ইঞ্চি! আর আমরাতো ছোট খাটো নেতা, লোকাল নেতা, দুই ফুট ৩ ইঞ্চি। ওই লম্বা নেতাতো আমাদের মত ছোট নেতাদের পায়ের নিচে পিষে মারতে চাইবে। তাই হয়তো এক হওয়া যাচ্ছে না। কারণ ওই নেতা যা নির্দেশনা দেয় একটা গ্রুপ তাই করে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ তার নির্দেশেই চলে। আমরা লোকাল রাজনীতি করি। নিজেদের পকেটের টাকা নিয়ে কর্মীদের পাশে আছি। আর তিনি তো টানা এমপিগীরি করছেন। তিনি একটা ফু দিলেই যথেষ্ট। সে অনেক হাকডাক দেয়, কিন্তু তিনি কী হরতাল অবরোধে মাঠে ছিল? এখনো কী মাঠে আছে? ঢাকায় সমাবেশ করে, লোকজন নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি সীমাবদ্ধ।’
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দলের প্রয়াত নেতা নাজমা রহমানকে তিনি (শামীম ওসমান) ফেল করিয়েছেন এবং লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করেছেন। তারাই এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী। সিটি করপোরেশনের নির্বাচন এলেও এগুলো দেখা যায়। আসলে ঐক্য তার মুখে মুখে। একদিকে ঐক্যের কথা বলে, আরেক দিকে ঐক্যবিরোধী কাজ করে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘অবরোধের বিরুদ্ধে আমি এবং আমার সভাপতি দুজন কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছি। সভাপতি সাহেব আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে থাকেন আর আমি শহীদ মিনারের দিকে থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান নিয়েছিলাম। আবার গোটা শহর ঘুরে ঘুরে শান্তিপ্রিয় মানুষদের পাশে ছিলাম। আসলে একেক জনের পক্রিয়াটা একেক রকম। তবে দুজনই দলের জন্যই কাজ করছি। আমি মনে করি এই কার্যক্রমগুলো যখন চলমান থাকলে পর্যায়ক্রমে সবাই এক হয়ে যাবে।’
এমপি শামীম ওসমান ও মেয়র আইভী প্রসঙ্গে বাদল বলেন, ‘শামীম ওসমান ‘আমাদের সহযোদ্ধা ও বন্ধু। আর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদক আবদুল হাই ভাই ও আমি। দলীয় বিষয়গুলো অবশ্যই আমাদের দেখার বিষয়। কারণ নেত্রী আমাদেরকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে শামীম ওসমান একজন এমপি এবং তিনি নিজেও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখনো উনি নারায়ণগঞ্জের সমস্ত বিষয়গুলো দেখেন। তিনি ম্যাসেজের মাধ্যমে মেয়র আইভীকে ঐক্যের কথা বলেছেন। বর্ধিত সভায় শামীম ওসমান তা প্রমাণ সহ দেখিয়েছেন। এখন ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আমাদের এক হওয়া উচিৎ। আমিতো শামীম ওসমানের পক্ষ থেকে নেগিটিভ কিছু দেখছি না। তিনি তো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার জন্য মেয়র মহোদয়কে ম্যাসেজও করেছেন। এখন মেয়র যদি তার মুখ থেকে এই বিষয়ে কোনো জবাব দিত তাহলে আমরা তৃপ্তি পেতাম। আমরা মনে করি যে, আগামী নির্বাচনে প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের জয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে যে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী হয়ে দলকে বিজয়ী করে তুলেছে। না হলে যারা দলের মধ্যে গ্রুপিং করা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাদেরকে দায় ভার বহন করতে হবে। আমরা বিশ^াস করি যে, নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনের মধ্য দিয়েই এই বিভাজনের সমাধান হবে, ইনশাআল্লাহ।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই বেলা শেষ হচ্ছে। কিন্তু ঐক্য আর হয়নি। এই ঐক্য আর কবে হবে। আমরা তৃণমূল কর্মী যারা আছি, আমরা ঐক্য চাই। কারণ এর বিকল্প নেই। ঐক্য হলে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আরোও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা যেত। আসলে ঐক্য কিভাবে হবে। শামীম ওসমান বলেন একটা আর করেন আরেকটা। তবে ঐক্য না হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা মাঠে ময়দানে আছি। আগামীতেও নেত্রীর নির্দেশনায় এই দেশের মানুষের জানমালের রক্ষার জন্য বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য প্রতিহত করার জন্য আমরা মাঠে থাকবো।’